প্রকাশ: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২০
আবু হেনা মুহিব
তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের নিকটতম প্রতিযোগী দেশ ভিয়েতনাম। বিশ্ববাজারে কয়েক বছর ধরে দু’দেশের রপ্তানি অনেকটা কাছাকাছি। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) তথ্য অনুযায়ী, গত বছর পর্যন্ত পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশ দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ভিয়েতনামের চেয়ে অনেক পিছিয়ে। সম্প্রতি ব্যবধান আরও স্পষ্ট করে দিয়েছে মহামারি করোনা। প্রধান বাজার যুক্তরাষ্ট্রে দেশটির রপ্তানির পরিমাণ বাংলাদেশের প্রায় দ্বিগুণ।
বিশ্বজুড়ে করোনা সংক্রমণের প্রভাবেই মূলত বাংলাদেশের তুলনায় বড় ব্যবধানে এগিয়ে যায় ভিয়েতনাম। বেশ কয়েকজন রপ্তানিকারক উদ্যোক্তা জানান, করোনা নিয়ন্ত্রণে থাকায় ভিয়েতনামের কোনো পোশাক কারখানা এক দিনের জন্যও বন্ধ রাখতে হয়নি। অথচ এখানে বেশিরভাগ কারখানা দীর্ঘ সময় বন্ধ ছিল। এ সুযোগে বাংলাদেশের কিছু ক্রেতা দেশটির কাছে চলে যায়। তিনি আরও বলেন, কাঁচামালের প্রধান উৎস দেশ চীনের নিকটতম প্রতিবেশী হওয়ায় এবং প্রযুক্তি ও অভিজ্ঞতায় এগিয়ে থাকায় অনেক চীনা উদ্যোক্তাও ভিয়েতনামে বিনিয়োগ করেছেন। ফলে প্রযুক্তির পাশাপাশি লিড টাইমের (রপ্তানি আদেশ পাওয়ার পর থেকে বন্দরে ক্রেতা প্রতিনিধির কাছে পণ্য বুঝিয়ে দেওয়া পর্যন্ত সময়) সুবিধায় এগিয়ে গেছে দেশটি।
যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি-সংশ্নিষ্ট কার্যালয় ‘অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের’ (ওটেক্সা) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে জানুয়ারি-জুলাই পর্যন্ত সাত মাসে পোশাক রপ্তানি কম হয়েছে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৯ শতাংশ। এ সময়ে ২৯০ কোটি ডলারের পোশাক গেছে দেশটিতে। আগের বছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ৩৫৭ কোটি ডলার। এ সময় ভিয়েতনামের রপ্তানির পরিমাণ ৬৯৪ কোটি ডলার। যুক্তরাষ্ট্রে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় তাদেরও রপ্তানি কমেছে ১১ শতাংশ। যদিও বাংলাদেশের মতো এত ব্যাপক হারে কমেনি।
জানতে চাইলে তৈরি পোশাক উৎপাদক ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর সহসভাপতি এমএ রহিম ফিরোজ সমকালকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানিতে ভিয়েতনামের কিছু শুল্ক্কছাড় সুবিধা পাওয়ার কথা ছিল। শেষ পর্যন্ত চুক্তিটি না হলেও যুক্তরাষ্ট্রের অনেক বড় ক্রেতা সেখানে বিনিয়োগ করেছেন। এর প্রভাব দেখা গেছে পরিসংখ্যানে।
বিজিএমইএর পরিচালক ও অ্যাডাম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহিদুল ইসলাম মুকুলও প্রায় একই কথা বলেন। তিনি জানান, ম্যান মেইড ফাইবারে যেতে পারলে ভিয়েতনামের সঙ্গে ব্যবধান হয়তো কিছুটা কমানো যেতে পারে। অন্য কোনো বিবেচনায় তাদের কুলিয়ে ওঠা দুরূহ। তিনি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে করা মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) কার্যকর হচ্ছে শিগগির। তখন ইইউর বাজার নিয়েও ভিয়েতনামের সঙ্গে লড়তে হবে তাদের। অন্যান্য সুবিধায় এগিয়ে থাকা ভিয়েতনামের তুলনায় বড় ব্যবধানে পিছিয়ে পড়বে বাংলাদেশ। এখন শুল্ক্কমুক্ত সুবিধায় ইইউতে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ।
অটেক্সার তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত সময়ে বিভিন্ন দেশ থেকে মোট তিন হাজার ৩৮৮ কোটি ডলারের পোশাক আমদানি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। আগের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল চার হাজার ৮৮৭ কোটি ডলার।