২৮ এপ্রিল ২০২০, ১২:৪২
বাড়তি সময় পেয়েও আমদানি পণ্যবাহী কনটেইনার খালাস না নিয়ে বন্দরে ফেলে রেখেছিলেন পোশাকশিল্প মালিকেরা। এসব কনটেইনার বন্দরে রাখার ভাড়ায় আবারও ছাড় পেলেন তারা। সোমবার নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনে বন্দর কর্তৃপক্ষ পোশাকশিল্প মালিকদের সুবিধা দিয়ে এই আদেশ জারি করেছে। পোশাকশিল্প মালিকেরা সুবিধা পেলেও সরকারি সংস্থার কারণে সবচেয়ে আর্থিক ক্ষতির শিকার হওয়া বাণিজ্যিক আমদানিকারকেরা কোনো ছাড় পাচ্ছেন না।
বন্দর কর্মকর্তারা জানান, ২৬ মার্চ সাধারণ ছুটির সময় থেকে বন্দর দিয়ে আমদানি করা সব ধরনের কনটেইনার রাখার ভাড়ায় ছাড় দেওয়া হয়েছিল। সাধারণ ছুটির কারণে বেশিরভাগ সংস্থার সেবার আওতা সীমিত করায় এই ছাড় দেওয়া হয়। কিন্তু ছাড় দেওয়ার সুবিধা নিয়ে উল্টো বন্দরে কনটেইনার ফেলে রেখে জট তৈরি করায় ২০ এপ্রিলের পর সে সুবিধা প্রত্যাহার করে নেয় বন্দর। এখন আবার বিজিএমইএ’র চাপে এই সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।
নতুন আদেশের বিষয়ে বন্দর সচিব ওমর ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, বিজিএমইএ’র আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই সুবিধা আগামী ৪ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে খালাস নেওয়া হলে শুধু বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ সদস্যদের আমদানি কনটেইনার রাখার ভাড়া দিতে হবে না।
বন্দরের ভাড়ার মাশুল হিসেব করে দেখা গেছে, এই সুবিধার কারণে প্রতিটি আমদানি পণ্যবাহী কনটেইনার রাখার ভাড়ায় সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা ছাড় পাচ্ছেন পোশাক শিল্প মালিকেরা। সবমিলিয়ে বন্দরে পড়ে থাকা প্রায় ১৩ হাজার কনটেইনারে সংগঠন দুটির সদস্যরা কম–বেশি ২০-২৫ কোটি টাকা ছাড় পাচ্ছেন বলে প্রাথমিক হিসাবে ধারণা পাওয়া গেছে।
স্বাভাবিক সময়ে জাহাজ থেকে নামানোর পর চারদিন পর্যন্ত বিনাভাড়ায় কনটেইনার রাখা যায় বন্দরে। এরপর প্রথম ধাপে প্রতিটি কনটেইনারে ছয় ডলার, দ্বিতীয় ধাপে ১২ ডলার এবং শেষধাপে ২৪ ডলার করে ভাড়া দিতে হয়।
বন্দর ব্যবহারকারীরা জানান, এর আগে ভাড়ায় ছাড়ের সুবিধা দেওয়ায় পোশাকশিল্প মালিকেরা আমদানি পণ্য বন্দরে ফেলে রেখেছিলেন। এতে বন্দরে ভয়াবহ কনটেইনার জট তৈরি হয়। নতুন এই সুবিধার কারণে পোশাকশিল্প মালিকেরা বন্দরে পণ্য ফেলে রাখতে আরও এক সপ্তাহ বাড়তি সময় পাচ্ছেন। এতেই বন্দরে জট আরও তীব্র হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
এ ব্যাপারে বিজিএমইএ’র পরিচালক অঞ্জন শেখর দাশ প্রথম আলোকে বলেন, আগে সুবিধা দেওয়া হলেও কারখানা বন্ধ ছিল। আবার পণ্য খালাসে যুক্ত সংস্থাগুলোর কার্যক্রম সীমিত ছিল। সে কারণে সুবিধা দেওয়ার পরও পণ্য খালাস হয়নি। এবার অবশ্য পণ্য খালাসের হার বাড়বে। কারণ এখন সব সংস্থার কার্যক্রম বা সেবার আওতা বেড়েছে। কারখানাও খুলেছে।
বন্দরের সাম্প্রতিক এক হিসেবে দেখা যায়, বন্দর দিয়ে কনটেইনারে আমদানি হওয়া পণ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হলো পোশাকশিল্পের কাঁচামাল, সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি। এই হার মোট আমদানির প্রায় ৪০ শতাংশ।
পোশাকশিল্প মালিকেরা ছাড় পেলেও অন্য আমদানিকারকেরা তা পাচ্ছেন না। অথচ সাধারণ ছুটির সময় রাজস্ব বোর্ডের নিষেধাজ্ঞার কারণে ২৬ মার্চ থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত একটানা ২৭ দিন বাণিজ্যিক আমদানিকারকেরা পণ্য খালাস করতে পারেননি। যখন কাস্টমস থেকে পণ্য খালাসের সুযোগ দেওয়া হয় তার আগে বন্দরে কনটেইনার রাখার ভাড়ায় ছাড়ের সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছিল। এতে বাণিজ্যিক আমদানিকারকেরা খালাস নেওয়ার আগেই বন্দর ও জাহাজ কোম্পানির ভাড়াসহ প্রতিটি কনটেইনার সর্বোচ্চ এক লাখ টাকার মতো অতিরিক্ত খরচ যুক্ত হয়েছিল।
এমন ভুক্তভোগী চট্টগ্রামের ইত্যাদি ইলেকট্রিকের কর্ণধার আলাউদ্দিন আল আজাদ। এই আমদানিকারক জানান, চীন থেকে আমদানি করা তাঁর প্রতিষ্ঠানের সাত কনটেইনার বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম নিষেধাজ্ঞার কারণে বন্দর থেকে খালাস নিতে পারেননি। যখন খালাসে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয় তখন এই সাত কনটেইনার খালাস করে বাড়তি মাশুল দিতে হয়েছে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা। লাভ তো দূরের কথা, পুঁজি থেকে প্রায় কয়েক লাখ টাকা খোয়াতে হয়েছে।
বাণিজ্যিক আমদানিকারকদের সবচেয়ে বেশিসংখ্যক কনটেইনার আছে ইস্পাতের পাত আমদানিকারকদের। এই খাতের সংগঠন বাংলাদেশ আয়রন অ্যান্ড স্টিল মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি আমীর হোসেন নুর আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাজস্ব বোর্ডের নিষেধাজ্ঞার কারণে বাণিজ্যিক আমদানিকারকেরা সাধারণ ছুটির সময় একটানা ২৭ দিন পণ্য খালাস করতে পারেনি। যখন খালাসের সুবিধা দেওয়া হয়, তখন বন্দর কর্তৃপক্ষও ছাড়ের সুবিধা তুলে নেয়। এতে প্রতিটি কনটেইনারে বন্দর কর্তৃপক্ষ ও কনটেইনার মালিকপক্ষের ভাড়াসহ এক লাখ টাকা বাড়তি মাশুল দিতে হচ্ছে। অনেক প্রতিষ্ঠানই এই ধাক্কা সামলে নিতে পারবে না।’