সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় আন্তর্জাতিক শ্রমসংস্থার (আইএলও) সদর দপ্তরে গতকাল সোমবার শুরু হয়েছে ১০৮তম আন্তর্জাতিক শ্রম সম্মেলন-২০১৯। এতে বাংলাদেশের শ্রম আইন সংশোধনসহ বেশ কিছু ইতিবাচক উদ্যোগ নেওয়া হলেও গত বছরের ডিসেম্বরে ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়ন নিয়ে পোশাক কারখানার কয়েক হাজার কর্মী ছাঁটাই ও ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকারসহ বেশ কিছু শর্ত নিয়ে চাপে পড়তে পারে বাংলাদেশ।
এ ছাড়া সম্মেলনে আইএলও শর্তবর্ষ পূর্তি নিয়ে গত ১০০ বছরে সংগঠনটির প্রাপ্তি এবং ভবিষৎ করণীয় নিয়েও দিকনির্দেশনা থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।
‘বিশ্ব কর্মসংস্থানের ভবিষৎ চ্যালেঞ্জ’ বিষয়ে এই সম্মেলনে বিশ্বের প্রায় পাঁচ হাজার প্রতিনিধি এবারের সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন বলে আইএলও সূত্রে জানা গেছে। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ থেকে অর্ধশতাধিক প্রতিনিধির একটি বিশাল দল এই সম্মেলনে অংশগ্রহণ করছে।
১২ দিনের এই সম্মেলন শেষ হবে আগামী ২১ জুন। এতে বাংলাদেশ সরকারের শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান, মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব কে এম আলী আজম, মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির সদস্য, শ্রমিক নেতা, পোশাক খাতের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশন (বিইএফ) এবং এমসিসিআই থেকে প্রতিনিধিরা অংশ নিচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে শ্রম অধিকার নিশ্চিত করতে আইএলওর দেওয়া নির্দেশনাগুলো বাংলাদেশ এবার বেশ ভালোভাবেই নিশ্চিত করেছে। এরই মধ্যে শ্রম আইন সংশোধন করে কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন করার রেজিস্ট্রেশনের জন্য মোট শ্রমিকের ৩০ শতাংশের স্থলে ২০ শতাংশ করা হয়েছে। এ ছাড়া সংশোধিত শ্রম আইন ২০১৮ রপ্তানি প্রক্রিয়া অঞ্চল (ইপিজেড) সংশোধন করে শর্তানুসারে শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খান, শ্রম আইন সংশোধনের পরও দেশের শ্রমিকদের অবাধ অধিকার নিশ্চিত হয়নি। তিনি বলেন, আইএলও কনভেনশন অনুসারে ট্রেড ইউনিয়ন করার ক্ষেত্রে কোনো রকম শর্ত ছাড়াই এই ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার দিতে হবে।
তিনি আরো বলেন, আন্তর্জাতিক চাপে শ্রম আইন সংশোধন করা হলেও এখনো কোনো কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন করার ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ শ্রমিকের সম্মতি লাগবে। এর আগে ছিল ৩০ শতাংশ। ফলে দেশের শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করার প্রত্যাশা এখনো পূরণ হয়নি।
মন্ত্রণায়লয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল আন্তর্জাতিক শ্রম সম্মেলন শুরু হলেও এখনো সরকারের মন্ত্রী-সচিব সম্মেলনে পৌঁছতে পারেননি। গতকাল রাতে তাঁরা জেনেভার উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছেন।
পোশাক খাতের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক আইএসি থেকে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘পোশাক খাতের শ্রমিকদের কর্মপরিবেশ ও অধিকার নিয়ে আমরা খুবই সচেতন। এ ছাড়া আইএলওর সব শর্তই আমরা পূরণ করেছি। এর পরও যেকোনো নেতিবাচক আলোচনা মোকাবেলা করার প্রস্তুতি রয়েছে আমাদের।’ আইএলওর এ দেশীয় পরিচালক ট্যুমো পোডিয়ানিন বলেন, ১০৮তম আন্তর্জাতিক শ্রম সম্মেলনে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১০০টির বেশি দেশ অংশগ্রহণ করছে। এতে বিশ্বের শ্রমব্যবস্থা সমস্যার সমাধানে তারা আলোচনা করবে। একই সঙ্গে বিশ্বকে কিভাবে আরো শ্রমবান্ধব করা যায় এবং ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা ঠিক করা হবে। এ ছাড়া আইএলওর শততম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপন করা হবে।