বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ-বিল্স এর উদ্যোগে এবং মনডিয়াল এফএনভি’র সহযোগিতায় ইন্টারন্যাশনাল কোমেমরেশন ডে উপলক্ষে ২৮ এপ্রিল, ২০১৯ জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে বিল্স এর উদ্যোগে জাতীয় পর্যায়ের সংবাদপত্রসমুহে ২০১৮ সালে প্রকাশিত শোভন কাজ, কর্মক্ষেত্র দুর্ঘটনা ও সহিংসতায় শ্রমিক হতাহতের সংবাদ ভিত্তিক সমীক্ষা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিল্স এর যুগ্ম মহাসচিব ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খান। সভাপতিত্ব করেন বিল্স এর ভাইস চেয়ারম্যান আলহাজ¦ শুক্কুর মাহমুদ। অন্যান্য ট্রেড ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আমিরুল হক আমিন, নইমুল আহসান জুয়েল, মোঃ কবির হোসেন, তৌহিদুর রহমান, আব্দুল ওয়াহেদ প্রমূখ।
লিখিত বক্তব্যে পোশাক শিল্পকে বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের অন্যতম উৎস হিসেবে উল্লেখ করে বলা হয়, এ শিল্প দেশের জিডিপিতে শতকরা ১৮ ভাগ অবদান রাখে এবং গত বছর রপ্তানি আয়ের মধ্যে ৮৩ দশমিক ৪৯ শতাংশই আসে তৈরি পোশাক শিল্প থেকে, সুতরাং এ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে এবং টেকসই উন্নয়ন ধরে রাখতে হলে শ্রমিকদের বাঁচার মতো মজুরি, জীবন ধারণের পরিবেশ, নিরাপদ কর্মক্ষেত্র ও পরিবেশ, শ্রমিকের মর্যাদা এবং শোভন কাজ নিশ্চিত করতে হবে। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, গার্মেন্টস্ এর সাব কন্ট্রাক্ট কারখানার শ্রমিকরা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে কাজ করছেন। অনেক কারখানার অবকাঠামোগত পরিবর্তন হলেও ভেতরের কাজের পরিবেশের পরিবর্তন অনেকাংশে অপরিবর্তনীয়। এই খাতের ২২ শতাংশ নারী শ্রমিককে এখনও শারীরিক, মানসিকভাবে নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে। এই নির্যাতনের পাশাপাশি অন্যান্য সমস্যা যেমন বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাব, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, পর্যাপ্ত আলো বাতাসের অভাব, প্রতিকূল পরিবেশে ইত্যাদি শ্রমিকদের কর্মক্ষেত্রকে ঝুঁকিপুর্ণ করে তুলছে।
রানা প্লাজা দুর্ঘটনা পরবর্তী অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল শ্রম আইন সংশোধন। তবে বর্তমান সংশোধনীতে শ্রমিক স্বার্থের যথাযথ প্রতিফলন ঘটেনি বলে মন্তব্য করা হয়। ইপিজেড আইনের কথা উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, একই দেশে দুটি শ্রম আইন থাকা সমীচিন নয়। বক্তারা তৈরী পোশাক শিল্পের ট্রেড ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দে বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান। এছাড়া পোশাক শ্রমিকদের যে ডাটাবেইজ করা হয়েছে তা বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএ’র আওতায় না রেখে সরকারের অধীনে রাখার দাবি জানানো হয়।
বিলস্ এর সংবাদপত্র জরিপের তথ্য অনুযায়ী ২০১৮ সালে তৈরি পোশাক শিল্পে দুর্ঘটনায় ৩ জন শ্রমিক নিহত ও ১৮ জন শ্রমিক আহত হন। দুর্ঘটনার পরিমাণ কমলেও ২০১৮ সালে এ খাতের শ্রমিকদের উপর সহিংসতার পরিমাণ বেড়েছে যা সংখ্যায় মোট ১১০টি, যার মধ্যে ২৬ টি নির্যাতন, ২১ টি হত্যা, ১১টি ধর্ষণ এবং ৯টি গণধর্ষণ এর মতো ঘটনা রয়েছে। এছাড়া ২০১৮ সালে শুধু পোশাক শিল্প খাতে ১২৩ টি শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনা ঘটেছে এবং এতে সংঘর্ষে আহত হয়েছেন ২৯৮ জন শ্রমিক। বকেয়া বেতন আদায়ের দাবিতেই ৫৪ টি শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনা ঘটে। এছাড়াও শ্রমিক মৃত্যু, বিনা নোটিসে কারখানা বন্ধ, কারখানা পুণরায় চালু, ন্যায্য মজুরি ও শ্রম অধিকার আদায়ের দাবিতেও শ্রম অসন্তোষ দেখা দেয়।
উল্লেখ্য, বিশে^র বিভিন্ন স্থানে পেশাগত দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতদের স্মরণে প্রতি বছর এ দিবসটি পালন করা হয় । নিরাপদ, স্বাস্থ্যসম্মত ও মর্যাদাকর কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক ক্যাম্পেইনের অংশ হিসেবে বাংলাদেশেও বিশেষ গুরুত্বের সাথে দিবসটি পালন করা হয়।