নিজস্ব প্রতিবেদক ১৭ এপ্রিল, ২০২০
► বিজিএমইএর দাবি ৮৭% গার্মেন্ট শ্রমিক মার্চের মজুরি পেয়েছেন
► ১২১ ও ১২৩ ধারায় মামলা করবে শ্রম মন্ত্রণালয়
► বাকি শ্রমিকদের মজুরি ২০ থেকে ২২ এপ্রিলের মধ্যে
তৈরি পোশাক খাতের ২১ লাখ ৫৯ হাজার ১০০ শ্রমিক মার্চের মজুরি পেয়েছেন বলে জানিয়েছে বিজিএমইএ। যা বিজিএমইএ সদস্য কারখানাগুলোয় কর্মরত শ্রমিকের ৮৭ শতাংশ। আর বিজিএমইএর তথ্য মতে, সংগঠনটির সদস্য প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এমন তিন লাখ ১৩ হাজার ৩১৭ শ্রমিক এখনো মার্চের মজুরি পাননি।
বিজিএমইএ সক্রিয় কারখানায় ২৪ লাখ ৭২ হাজার ৪১৭ জন শ্রমিক কাজ করেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বিজিএমইএ এসব তথ্য জানায়। শ্রম মন্ত্রণালয় ঘোষিত মজুরি পরিশোধের শেষ দিন গতকাল থাকলেও বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের দাবি, ৩০ শতাংশ কারখানা গতকাল পর্যন্ত বকেয়া মজুরি পরিশোধ করেনি।
এদিকে বিজিএমইএ আরো জানায়, তাদের সদস্য দুই হাজার ২৭৪ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এক হাজার ৬৬৫টি শ্রমিকদের মজুরি পরিশোধ করেছে। অর্থাৎ ৭৩ শতাংশ কারখানা শ্রমিকদের মার্চের মজুরি পরিশোধ করেছে। এ ছাড়া ঢাকার ৯৭টি এবং চট্টগ্রামের ১১৯টি প্রতিষ্ঠানের মজুরি পরিশোধ প্রক্রিয়াধীন।
শ্রম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, যেসব কারখানা গতকাল পর্যন্ত মজুরি পরিশোধ করেনি তাদের লাইসেন্স নবায়ন করা হবে না।
এদিকে গতকাল রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে বকেয়া মজুরির দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন শ্রমিকরা।
শিল্প পুলিশ সূত্র জানায়, গতকাল সকাল থেকে গাজীপুর, টাঙ্গাইল ও সাভারে ১০ থেকে ১২টি কারখানার শ্রমিকরা বকেয়া মজুরির দাবিতে রাস্তা অবরোধ করেন। আশুলিয়ার টেংগুরী পুকুরপাড়, কলতাসুতী, কুটুরিয়া, পূর্ব নরসিংহপুর, নরসিংহপুর ও খেজুরবাগান এলাকায় বিক্ষোভ হয়। কারখানাগুলো হলো গ্লোরিয়াস ড্রেস লিমিটেড, ফ্রাউলেন ফ্যাশন লিমিটেড, জেড এ অ্যাপারেলস, টপগ্রেড ওয়াশিং লিমিটেড, আদিয়াত অ্যাপারেলস লিমিটেড, ক্যাথে অ্যাপারেলস লিমিটেড ও ক্রিস্টাল কম্পোজিট লিমিটেড। বিকেল ৪টা পর্যন্ত বেশ কিছু কারখানার শ্রমিকরা অবরোধ তুলে নিলেও কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা কারখানার গেটে অবস্থান করছিলেন। এ ছাড়া শ্রমিক সংগঠন সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর মতিঝিল, কমলাপুর, মিরপুর, বাড্ডা এবং উত্তরায় শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেছেন।
গতকাল বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ‘বৃহস্পতিবার বিজিএমইএ সদস্য কারখানার ৮৭ শতাংশ শ্রমিকের মজুরি পরিশোধ করেছেন। অন্যদের ২০ থেকে ২২ এপ্রিলের মধ্যে পরিশোধের চেষ্টা করছেন তাঁরা। যেসব কারখানা মজুরি পরিশোধ করেনি, এ কারখানাগুলো ক্ষুদ্র ও মাঝারি।’ তিনি বলেন, ‘এমন একটা সময় উদ্যোক্তারা সমস্যায় পড়েছে, যখন ক্রেতারা অর্ডার বাতিল করছে, দেরিতে টাকা দিচ্ছে। আবার কেউ কেউ টাকা দিচ্ছে না। ফলে এই সময় ছোট কারখানাগুলোকে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। এসব কারখানাকে আমরা ব্যাংকগুলোকে সহযোগিতা করতে আহ্বান জানিয়েছি। তারা অনুরোধে সাড়াও দিচ্ছে। কিন্তু এমন কিছু কারখানা আছে, যারা আমাদের সদস্য নয়। ওই সব কারখানার শ্রমিকরা রাস্তায় নেমে এসেছেন। তাঁদের সহযোগিতা করতে ক্রেতাদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই।’
শ্রমসচিব কে এম আলী আজম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গতকাল পর্যন্ত যেসব কারখানা শ্রমিকদের মজুরি পরিশোধ করেনি তাদের বিরুদ্ধে শ্রম আইন ১২১ এবং ১২৩ ধারা অনুসারে মামলা হবে। এ ছাড়া যৌক্তিক কারণ ছাড়া মজুরি বকেয়া রাখা হলে সেসব কারখানার লাইসেন্স নবায়ন করা হবে না। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তালিকা তৈরির জন্য শ্রম অধিদপ্তরকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
জাতীয় গার্মেন্ট শ্রমিক ফেডারেশন এক বিবৃতিতে জানায়, ১৬ এপ্রিলের মধ্যে সব পোশাক শ্রমিকের মার্চ মাসের বেতন-ভাতা পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছিল সরকার। কিন্তু এখনো ৩০ শতাংশ শ্রমিক মার্চ মাসের বেতন-ভাতা পাননি।
কালের কণ্ঠ’র নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর জানান, গাজীপুরে লকডাউনের মধ্যেই মজুরির দাবিতে গতকাল সকাল থেকে বিভিন্ন স্থানে গার্মেন্ট শ্রমিকরা বিক্ষোভ ও মহাসড়ক অবরোধ করেন। খবর পেয়ে থানা ও শিল্প পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এরপর কারখানার মালিকপক্ষের সঙ্গে কথা বলে বেতন পরিশোধের তারিখের আশ্বাস দিলে শ্রমিকরা মহাসড়কের অবরোধ তুলে বাড়ি ফিরে যান।
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার টিপুরদী এলাকার ইউসান নিট কম্পোজিটের শ্রমিকরা গতকাল সকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন। এতে মহাসড়কের দুই পাশে কয়েক শ যানবাহন আটকে পড়ে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে বকেয়া মজুরি দেওয়ার আশ্বাস দিলে শ্রমিকরা অবরোধ তুলে নেন।
বকেয়া বেতনের দাবিতে নারায়ণগঞ্জের সদর উপজেলার ফতুল্লার ইদ্রাকপুর পোস্ট অফিস চত্বর ও গাবতলী পুলিশ লাইনস এলাকায় আলাদা দুটি পোশাক কারখানার কয়েক শ শ্রমিক সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করেছেন। গতকাল দুপুরে ঘণ্টাব্যাপী এ বিক্ষোভ চলে। ২১ এপ্রিলের মধ্যে মজুরি দেওয়ার আশ্বাস দিলে শ্রমিকরা অবরোধ তুলে নেন।
রাজধানীর আদাবরে বকেয়া মজুরির দাবিতে ফ্যালকন ইন্টারন্যাশনাল নিট কম্পোজিটের সামনে অবস্থান নেন প্রায় হাজারখানেক পোশাক শ্রমিক।
সকাল ১১টার দিকে বকেয়া বেতন-ভাতা ও জরুরি ত্রাণ সহায়তার দাবিতে বিমানবন্দর গোলচত্বর এলাকায় সড়ক অবরোধ করেছেন উত্তরা দক্ষিণখান এলাকার তিনটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। শ্রমিকরা জানান, রেদওয়ান, সিএনবি ও স্যার ডেনিম কারখানার মালিকপক্ষ পলাতক। মিরপুরের রূপনগরের মনির ফ্যাশন গার্মেন্টের শতাধিক শ্রমিক প্রধান সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।
বকেয়া মজুরির দাবিতে কমলাপুরের বিশ্বাস টাওয়ারের কাছে বিন্নী গার্মেন্ট ও সর্দার গার্মেন্টের কয়েক শ শ্রমিক গতকাল সকাল ৯টার দিকে সড়কে নেমে বিক্ষোভ করে। সর্দার গার্মেন্ট কর্তৃপক্ষ পরে এসে মজুরি দিতে শুরু করলে শ্রমিকরা শান্ত হন। আর বিন্নী গার্মেন্টের মালিকপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা পুলিশকে জানান, দুপুর থেকে তাঁরা শ্রমিকদের বেতন দেবেন।