download
গণপরিবহন বন্ধ থাকায় অনেক কষ্টে ও ঝুঁকি নিয়ে শনিবার (৪ এপ্রিল) গাজীপুরে পোশাক শ্রমিকেরা কর্মস্থলে ফেরেন। নির্ঘুম রাত শেষে রবিবার (৫ এপ্রিল) সকালে কাজেও যোগ দেন। কিন্তু কারখানা খুলে দেওয়ার প্রায় ৪ ঘণ্টার মধ্যেই নোটিশ দিয়ে অধিকাংশ কারখানা আবার বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
তবে রফতানি অর্ডার রয়েছে এবং পিপিই তৈরি করার অযুহাতে কয়েকটি কারখানা এখনও চালু রয়েছে। এদিকে কারখানাগুলো পুনরায় বন্ধ ঘোষণা করায় শ্রমিকরা আরেক সমস্যায় পড়েছেন। তারা বলছেন, করোনার ভ’য়ে তাদের ভাড়া বাসার মালিকরা এ মুহূর্তে থাকতে দিচ্ছেন না। অপরদিকে, মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় তারা বাড়িতেও যেতে পারছেন না।
২৬ মার্চ থেকে ১০ দিন বন্ধ থাকার পর যেসব শ্রমিক বাড়ি ফিরে গিয়েছিলেন তার প্রায় ৮০ ভাগ শ্রমিক শুক্রবার ও শনিবার চলে এসেছেন গাজীপুর এবং আশপাশের এলাকায়।
শ্রীপুরের বহেরার চালা এলাকার বাড়ির মালিক এবং স্থানীয় ওয়ার্ড কমিউনিটি পু’লি’শের সাধারণ সম্পাদক আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘আমার বাড়িতে ১০ জন শ্রমিক পরিবার নিয়ে ভাড়া থাকেন। কারখানা খোলা থাকার কারণে তারা গতকাল রাতে বাসায় এসেছে। এখন কারখানা বন্ধের ঘোষণা দেওয়ায় তাদের বাড়ি চলে যেতে হবে। করোনা আ’ক্রা’ন্তের ভ’য়ে তাদের আমরা বাড়িতে রাখতে চাচ্ছি না।’
গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার বেড়াইদেরচালা গ্রামের পলমল গ্রুপের আসওয়াদ কম্পোজিট মিলের কোয়ালিটি অপারেটর আব্দুল মজিদ। তার বাড়ি টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার টেগরী গ্রামে। রবিবার দুপুরে বাড়ি যাওয়ার পথে ওই কারখানার সামনেই সাংবাদিকের কাছে ক্ষো’ভের তিনি ক্ষো’ভের সঙ্গে বলছিলেন, ‘সরকার করোনাভাইরাস রোধ করার জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা নিলেও পোশাক কারখানার মালিকরা করোনাকে ডেকে নিয়ে আসছেন।
মালিক ঘরে বসে বাঁচতে পারবে, আমরা শ্রমিকেরা ঘরে বসে থাকলে মালিকরা বেতন দেবে না। মালিকদের কথামতো অফিসে না আসলে চাকরি চলে যেতে পারে। বেতনও হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে। তাই জীবন হাতে নিয়ে ছুটে আসার একটাই কা’রণ। ’
গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার বহেরারচালা (গিলাবেড়াইদ) গ্রামের নান্তাবুর গ্রুপের তাকওয়া গার্মেন্টস্ খোলা রয়েছে। দুপুরে লাঞ্চ বিরতির সময় ওই কারখানার সামনে গিয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বললে তারা কারখানা মালিকের বি’রু’দ্ধে ক্ষো’ভ প্রকাশ করেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শ্রমিকরা বলেন,
‘আমরা অনেক ক’ষ্ট করে গতকাল এসেছি। আমাদের মালিক জোর করে কারখানায় কাজ করাচ্ছে। করোনা মোকা’বেলায় কোনও রকম ব্যবস্থা না নিয়ে কাজ করানোয় আমরাও ভ’য়ে আছি। চাকরি যাওয়ার ভ’য়ে জীবনের ঝুঁ’কি নিয়ে আমাদের কাজ করতে হচ্ছে। ’
কাছাকাছি এলাকার শ্রমিকরা পায়ে হেঁটে যাওয়ার চেষ্টা করছেন এ বিষয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে দায়িত্বপ্রাপ্ত সিকিউরিটি সুপারভাইজার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘বাইরের কোনও লোকের সঙ্গে কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়ে কথা বলা নিষেধ রয়েছে।’ এ সময় কর্তৃপক্ষের কারও ফোন নম্বর দেওয়াও নিষেধ আছে বলে তিনি জানান।
মাস্টারবাড়ী নতুন বাজার এলাকার এস এস নিট ওয়্যার লিমিটেডের সুপারভাইজার শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার লংগারপাড়া গ্রামের শাহ আলম বলেন, ‘সরকার বা গার্মেন্টস মালিক সমিতি যদি একদিন আগেও আমাদের বন্ধের কথা জানাতো তাহলে জীবনের ঝুঁ’কি নিয়ে অনেক গুণ ভাড়া দিয়ে আমাদের গ্রাম থেকে আসতে হতো না। যে কয় টাকা বেতন পাবো তা শুধু আসা-যাওয়া, বাড়ি ভাড়া ও দোকান বাকির টাকা দিলেই শেষ হয়ে যাবে।’
কোয়ালিটি ইন্সপেক্টর নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার বানির কান্দা গ্রামের মেহেদী হাসান বলেন, ‘করোনাভাইরাসের এ মুহূর্তে বিপ’জ্জ’নক খেলায় আমরা গরিব শ্রমিকেরা মাঠের খেলোয়াড়। আমাদের মাঠে ছেড়ে দিয়ে সরকার ও মালিকেরা বড় বড় ভবনে বসে খেলা দেখে। আমরা বাঁচলে কী? মরলে কী? তাতে কার কী আসে-যায়?’
বাগেরহাট সদর উপজেলার বাদখালি গ্রামের আল-আমির হোসেন। সহকারী অপারেটর (হেলপার) হিসেবে চাকরি করেন শ্রীপুরের তাকওয়া পোশাক কারখানায়। তিনি বলেন, ‘করোনার ভয়ে ভাড়াবাসায় মালিক থাকতে দিচ্ছে না। অনেক অনুরোধ করে রাতটা পার করছি। এদিকে, সড়কে কোনও যানবাহনও চলাচলও করে না।
যে কয়টা যানবাহন চলাচল করছে সেগুলো পু’লি’শ আটকিয়ে মাঝপথে যাত্রীদের নামিয়ে দিচ্ছে। এ মুহূর্তে কোথায় যে যাই ভেবে পাচ্ছি না।’