ঢাকা , শুক্রবার, ২৩ আগস্ট ২০১৯
ব্যবসার অযোগ্য পোশাক কারখানা বাড়ছে। ২০১৪ সাল থেকে শুরু করে চলতি বছরের ২৪ জুলাই পর্যন্ত সব মিলিয়ে ১৪২টি পোশাক কারখানা অ্যাকর্ডে স্বাক্ষরকারী ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে ব্যবসার যোগ্যতা হারিয়েছে। এ সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে।
দেশের রপ্তানি আয়ের শীর্ষ জোগানদাতা পোশাক খাতের উল্লিখিত খবরটি নিঃসন্দেহে নেতিবাচক। অ্যাকর্ডের মাধ্যমে পরিদর্শনকৃত বহু কারখানাকে পর্যায়ক্রমে প্রয়োজনীয় সংস্কারের গাইডলাইন দেয়া হয়েছিল। অনেকেই সেটি বাস্তবায়ন করে কারখানা নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে আবার অনেকেই তা পারেনি। সংস্কারে ব্যর্থ হওয়া কারখানাগুলোর সঙ্গে বড় ব্রান্ডের ব্যবসায়িক সম্পর্ক বাতিল হলে তাতে করে কারখানার শ্রমিকরা যে চাকরি হারানোর ঝুঁকি বা অনিশ্চয়তায় পড়বেন তা বলাবাহুল্য। শুধু শ্রমিক বেকারত্বের ঝুঁকিই নয়, এর নেতিবাচক প্রভাব দেশের রপ্তানি আয়ের ওপরও পড়বে। প্রশ্ন হলো, কারখানা মালিকদের এই না পারার কারণ কি?
এ প্রসঙ্গে কারখানা মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ অভিযোগ করে বলেছে, কারখানার সংস্কার প্রক্রিয়ার শেষ পর্যায়ে এসে টেস্টিং কমিশনিংয়ের (চূড়ান্ত পরীক্ষা) নামে নতুন নতুন যন্ত্রপাতি স্থাপনের শর্তজুড়ে দেয়া হচ্ছে। অনেক কারখানা সংস্কার সম্পন্ন করার পরও অ্যাকর্ড সনদ দিচ্ছে না। উল্টো অনেক কারখানার সংস্কারে অগ্রগতি হয়নি বলে অ্যাকর্ডভুক্ত ব্র্যান্ডগুলোকে জানানো হচ্ছে। অন্যদিকে অ্যাকর্ড বলছে, কারখানাগুলোতে ভবনের কাঠামো ও বৈদ্যুতিক নিরাপত্তায় গড়ে ৯০ শতাংশের বেশি সংস্কার হলেও অগ্নি নিরাপত্তা অগ্রগতি মাত্র ৫৪ শতাংশ। শত শত পোশাক কারখানায় অগ্নি নিরাপত্তাসহ অন্যান্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার সক্ষমতা নিয়ে এখনও বড় প্রশ্ন রয়েছে। তাছাড়া, সরকারি আওতাধীন কারখানাগুলোতে পরিদর্শনের স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
বোঝাই যাচ্ছে, গার্মেন্ট কারখানা সংস্কার ইস্যুতে ইউরোপের ক্রেতাদের পরিদর্শন জোট অ্যাকর্ডের সঙ্গে মালিকপক্ষের বড় আকারের বিরোধ চলছে। এ বিরোধ দীর্ঘায়িত হলে সেটা যে পোশাক শিল্পের জন্য অনুকূল পরিস্থিতির কারণ হবে না তাও নির্দ্বিধায় বলা যায়। কাজেই বিরোধ মীমাংসায় দুপক্ষকেই সমঝোতার ভিত্তিতে এগিয়ে আসতে হবে। এবং এক্ষেত্রে মালিকপক্ষকেই মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে। কারণ বাংলাদেশ থেকে পোশাক শিল্পের বাণিজ্য অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হলে ক্ষতি যা হবার তা গোটা দেশের এবং মালিকপক্ষেরই হবে।
আগে প্রায় প্রতি বছরই পোশাক খাতে কোন না কোন দুর্ঘটনা ঘটত। কিন্তু গত কয়েক বছরে বড় কোন দুর্ঘটনা ঘটেনি। এ সময়ে ইউরোপের ক্রেতা জোট অ্যাকর্ড ও উত্তর আমেরিকার ক্রেতা জোট অ্যালায়েন্সের সুপারিশ অনুযায়ী, বেশিরভাগ কারখানাগুলোতে নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা হয়েছে। শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ বেড়েছে, তাদের মধ্যে সচেতনতাও বেড়েছে। তবে এ কাজ এখনও পুরোপুরি সম্পন্ন হয়নি। অনেক কারখানার অগ্নি নিরাপত্তা এবং শ্রমিক পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। শত শত উদ্যোক্তা ইচ্ছাকৃতভাবে ব্যাংকের খাতায় অস্তিত্বহীন বা ঠিকানাহীন ঋণখেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন। দুর্নীতির মাধ্যমে ঋণ নেয়া তিন হাজার গার্মেন্ট এখন বন্ধ। এর বেশিরভাগ গার্মেন্টের কোন অস্তিত্বই নেই। উধাও হয়ে গেছে। সাড়ে ১৭ হাজার কোটি টাকা ঋণ না দিয়ে কয়েকশ’ উদ্যোক্তা সটকে পড়েছেন। ব্যাংকগুলোয় বিপুল মন্দ ঋণের সৃষ্টি সেই পুঞ্জীভূত প্রভাবের ফসল। অথচ মালিকদের অনেকেই শ্রমিকের পাওনা মজুরি পরিশোধ করেনি। কাজেই কোনভাবেই অসঙ্গতি এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। ঋণখেলাপি গার্মেন্ট মালিকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। ঋণের সমুদয় অর্থ আদায় করতে হবে। শ্রমিকের জীবনমান উন্নয়নে গুরুত্ব দিতে হবে। নিরাপদ কর্মক্ষেত্র বলতে যা বোঝায় তা পুরোপুরি নিশ্চিত করতে সংস্কার কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে।