৫ মাসে ঢাকা ও চট্টগ্রামে বন্ধ ৪৬ কারখানা, সংকট কাটছে না পোশাকশিল্পে

এম সায়েম টিপু   ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০

রানাপ্লাজা ধসের পর দেশের রপ্তানি আয়ের শীর্ষ খাত তৈরি পোশাক শিল্প বড় পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। কখনো সংকট আবার কখনো আশার আলো উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। এর পরও গত এপ্রিল থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত পাঁচ মাসে বিপুলসংখ্যক কারখানা বন্ধ হয়েছে। আবার কোথাও শ্রমিক ছাঁটাই হয়েছে। তবে রহস্যময় ব্যাপার হলো এত সংকটের পরও দেশের বৈদেশিক মুদ্রার আয়ে কোনো প্রভাব পড়েনি।

এ রহস্যের কারণ হিসেবে বিশ্লেষকরা জানান, বাংলাদেশের পোশাক শিল্প বিশ্ববাজারে চীনের পর দ্বিতীয় রপ্তানিকারক দেশ। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইতেও ছিল চমক দেওয়ার মতো রপ্তানি প্রবৃদ্ধি। তা ছাড়া রানা প্লাজা ধসের পর কারখানাগুলোতে গত পাঁচ বছরে অনেক সংস্কারকাজ হয়েছে। ফলে দেশে গড়ে উঠেছে বিশ্ব মানের কারখানা। বিশ্বের সেরা ১০ সবুজ কারখানার মধ্যে সাতটি বাংলাদেশে।

এত ইতিবাচক সংবাদের পরও কেন কারখানা বন্ধ হচ্ছে এবং শ্রমিক ছাঁটাই হচ্ছে তা জানতে চাইলে তৈরি পোশাক খাতের শীর্ষ সংগঠন পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিশ্ববাজারের দরপতন, ক্রেতার কম দামে পোশাক কেনার প্রবণতা এবং সংস্কারের চাপ সামাল দিতে না পারায় উদ্যোক্তারা কারখানা বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছে। ফলে গত পাঁচ মাসে ৪৬টি কারখানা বন্ধ হয়েছে। এসব কারখানায় কর্মহীন হয়েছে ২৫ হাজারের বেশি শ্রমিক।’

ইপিবির তথ্য মতে, গত জুলাইয়ে দেশের রপ্তানি আয় হয়েছে প্রায় ৪০০ কোটি ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮.৫৫ শতাংশ। যদিও গত আগস্টে নেতিবাচক রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এ ব্যাপারে বিজিএমইএ বলছে, ঈদের কারণে জুলাইয়ে তারা অগ্রিম রপ্তানি করে। আগস্টে ১০ থেকে ১৫ দিন কারখানা বন্ধ ছিল। ফলে এমন নেতিবাচক রপ্তানি হয়।

সার্বিক পরিস্থিতি বিষয়ে গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের (পিটিইউসি) সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার কালের কণ্ঠকে বলেন, এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত গত পাঁচ মাসে প্রায় ৪৬টি কারখানা বন্ধ হয়েছে এবং এসব কারখানায় বেকার হয়েছে প্রায় ২৫ হাজারেরও বেশি শ্রমিক। এমন তথ্য আংশিক সত্য। কারখানার মালিকরা আতঙ্ক ছড়ানোর জন্য ও সরকারে সুবিধা নেওয়ার জন্য এমন বিভ্রান্তি ছাড়াচ্ছেন।

জলি তালুকদার বলেন, রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর ক্রেতাগোষ্ঠীর চাপে রাজধানী থেকে বেশির ভাগ কারখানাই স্থানান্তর হচ্ছে। গাজীপুর আশুলিয়া এমনকি কুমিল্লা পর্যন্ত এখন অনেক সুদৃশ্য বড় বড় কারখানা তৈরি হয়েছে। তা ছাড়া বন্ধ হওয়া কারখানাগুলোর বেশির ভাগ শ্রমিক নতুন কারখানায় কাজ করছেন। এর ফলে মালিকদের পুরনো শ্রমিকের সুবিধা দিতে হয় না।

অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্ববাজারের পোশাকের দরপতন, উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি এবং কারখানায় প্রযুক্তির প্রভাব ও রানা প্লাজার পর কারখানাগুলোতে বড় পরিবর্তনের ফলে কিছুটা সংকট তৈরি হয়েছে। প্রযুক্তিতে খাপ খাওয়াতে না পারায় অনেক নারী শ্রমিক পেশা পরিবর্তন করলেও বন্ধ হওয়া কারখানার শ্রমিকরা নতুন নতুন কারখানায় কাজ করছেন।

তাঁদের মতে, পরিবর্তনের এই সময়ে সরকার-মালিক এবং শ্রমিক যৌথভাবে করণীয় ঠিক করে কাজ করতে হবে। এখন আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর পোশাক খাত বড় একটি পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এতে করে পোশাক রপ্তানি এবং উৎপাদনে কঠিন সংকট হওয়ার মতো কোনো প্রভাব পড়েনি। মালিকদের নতুন বাজার ও দাম পোশাক রপ্তানিতে নজর দিতে হবে।

বিআইডিএস সিনিয়র ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, ‘বিশ্ববাজারে দরপতন, অভ্যন্তরীণ বাজারে কারখানার মালিকদের অসুস্থ প্রতিযোগিতার ফলে সাময়িক সংকট তৈরি হয়েছে। এছাড়া প্রযুক্তির প্রভাবে কর্মহীন হয়ে পড়ছে শ্রমিকরা। তবে উৎপাদন এবং রপ্তানি কমেনি। তাই সরকারের উচিত কোন কোন কারখানা কেন বন্ধ হচ্ছে তা পর্যবেক্ষণে রাখা।’

বিজিএমইএ জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ফয়সাল সামাদ আশঙ্কার কথা উল্লেখ করে বলেন, আগামীতে আরো ৪০ থেকে ৫০টি কারখানা বন্ধ হবে। এতে আতঙ্কের কিছু নেই। উদ্যোক্তাদের পাশে দাঁড়াতে সরকারের দেওয়া প্রতিশ্রতি অনুসারে উৎসকর ০.২৫ শতাংশ দ্রুত কার্যকর করার আহ্বান জানান তিনি। কারখানা বন্ধ হলেও শ্রমিকরা নায্য পাওনা পাচ্ছে না উল্লেখ করে জাতীয় গার্মেন্ট শ্রমিক-কর্মচারী লীগ সভাপতি সিরাজুল, শ্রমিক নেতা সিরাজুল হক রনি বলেন, বন্ধ হওয়া কারখানার বেশির ভাগ শ্রমিকই আইন অনুযায়ী প্রাপ্য পাননি।