শ্রমিকের অধিকার চর্চা : খারাপ দেশের তালিকায় শীর্ষ দশে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১১:০৫ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ১২, ২০১৯ |  আপডেট: ১১:০৫:পূর্বাহ্ণ, জুলাই ১২, ২০১৯

ঢাকার পার্শ্ববর্তী সাভারের কর্ণপাড়ার আনলিমা টেক্সটাইলের কর্মী সুমন মিয়া মারা যান গত জানুয়ারিতে। আন্তর্জাতিক শ্রমিক ইউনিয়ন কনফেডারেশন বলছে, মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়ে প্রাণ হারান তিনি। ওই আন্দোলনে অর্ধশত শ্রমিক আহতও হন।

এর আগে গত বছর ঢাকার আশিয়ানা গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের সামনে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নেয়া ১২ শ্রমিক নেতা ও সদস্যের বিরুদ্ধে সহিংসতার অভিযোগ আনে মালিকপক্ষ। যদিও ওই ১২ জনের মধ্যে মাত্র তিনজন কর্মসূচিতে অংশ নেন।

এসব তথ্য তুলে ধরে আন্তর্জাতিক ট্রেড ইউনিয়ন কনফেডারেশন বলছে, শ্রমিক অধিকারের নিশ্চয়তা নেই যেসব দেশে বাংলাদেশ তার অন্যতম। ১৪৫টি দেশে শ্রম অধিকার পরিস্থিতি মূল্যায়নের পর ‘বৈশ্বিক শ্রম অধিকার সূচক: শ্রমিকদের জন্য সবচেয়ে খারাপ দেশ’ শীর্ষক প্রতিবেদন সম্প্রতি প্রকাশ করেছে বিশ্বে ট্রেড ইউনিয়নের সবচেয়ে বড় এ ফেডারেশনটি। ব্রাসেলভিত্তিক সংগঠনটির প্রতিবেদনে ২০১৭ ও ২০১৮ সালের মতো ২০১৯ সালেও শ্রমিক অধিকারের নিশ্চয়তা না থাকা দেশের তালিকায় জায়গা হয়েছে বাংলাদেশের।

এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সামনে থাকা একমাত্র দেশ আলজেরিয়া। এ ছাড়া অন্য আট দেশ হলো যথাক্রমে-ব্রাজিল, কলম্বিয়া, গুয়াতেমালা, কাজাখস্তান, ফিলিপাইন, সৌদি আরব, তুরস্ক এবং জিম্বাবুয়ে। মোট ১৪৫টি দেশের শ্রম অধিকার পরিস্থিতি মূল্যায়নের পর আইটিইউসি এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ছয়টি বিষয়ে ১ থেকে ৫ ও তদূর্ধ্ব রেটিংয়ের ভিত্তিতে এই শ্রম অধিকার সূচক তৈরি করা হয়েছে। বিশেষ করে শ্রম অধিকারের স্বীকৃতি নেই এমন দেশগুলোকে রাখা হয়েছে ৫ বা তদূর্ধ্ব রেটিংয়ের তালিকায়। রেটিং ৪-এর মধ্যে থাকা দেশগুলোতেও পরিকল্পিতভাবে অধিকার লঙ্ঘন হয়। ৩ রেটিংপ্রাপ্ত দেশগুলোয় অধিকার লঙ্ঘন নিয়মিতভাবে। ২ রেটিং পাওয়া দেশগুলোয় অধিকার লঙ্ঘনের পুনরাবৃত্তি হয়।

তবে রেটিং ১ পাওয়া দেশগুলোয় বিক্ষিপ্তভাবে অধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটে। এ ক্ষেত্রে সমন্বিতভাবে সবচেয়ে বেশি শ্রম অধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটে মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকায়। এর পরে যথাক্রমে রয়েছে এশিয়া প্যাসিফিক, আফ্রিকা, আমেরিকা ও ইউরোপের নাম। সূচকে শ্রম অধিকারের কোনো স্বীকৃতি নেই এমন ৩৪টি দেশের মধ্যে রেটিং ৫-এর মধ্যে আছে বাংলাদেশ। যা বিবেচনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশে শ্রমিকদের ওপর নৃশংসতা, গণছাঁটাই ও ইউনিয়ন নেতাদের গ্রেপ্তারের বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তালিকার শীর্ষ ১০-এ না থাকলেও একই রেটিং পেয়েছে শ্রীলংকা, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনামও।

আইটিইউসি বলছে, ২০১৮ সালে শুধু কলম্বিয়াতেই অন্তত ৩৪ জন ট্রেড ইউনিয়ন সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে। এ ছাড়া ট্রেড ইউনিয়ন সদস্যরা হত্যার শিকার হয়েছেন বাংলাদেশ, ব্রাজিল, কলম্বিয়া, গুয়াতেমালা, হন্ডুরাস, ইতালি, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, তুরস্ক ও জিম্বাবুয়েতেও। হিংস্রতার শিকার হয়েছেন মোট ৫২টি দেশের শ্রমিকরা। অনেক দেশে কেড়ে নেওয়া হয়েছে শ্রমিকদের কর্মবিরতির অধিকার।

যেমন বাংলাদেশে শ্রমিকদের কর্মবিরতি কঠোর হাতে দমন করা হয়েছে, তেমনি দেওয়া হয়েছে শাস্তি। বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকরা প্রায়ই কর্মবিরতি ও আন্দোলনে নামেন। কিন্তু এর বিরুদ্ধে নৃশংসভাবে পুলিশ শক্তিপ্রয়োগ করেছে। যদিও গত বছর শ্রম অধিকারের ক্ষেত্রে অনেক দেশ আগের চেয়ে উন্নতি করেছে।

এর মধ্যে রয়েছে মরিশাস, মেক্সিকো, পাকিস্তান। ইউরোপেও শ্রম অধিকার পরিস্থিতি ভালো নয়। সেখানকার অন্তত ২৫ শতাংশ দেশে নানা কারণে শ্রমিকদের গ্রেপ্তার ও আটক করা হয়েছে। বিশেষ করে ইতালি ও তুরস্কে হত্যার শিকার হয়েছেন ট্রেড ইউনিয়ন নেতারা।