৯৬ বছর পর সংশোধন হচ্ছে বয়লার আইন

প্রকাশ: ২২ মার্চ ২০১৯

শিল্পকারখানার বিকাশের সঙ্গে বাড়ছে বয়লারের ব্যবহার। অনেক নতুন কারখানায়ও মানসম্মত বয়লার ব্যবহার হচ্ছে না। এতে বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি। এমন পরিস্থিতিতে প্রায় শতবর্ষের পুরনো আইন দিয়ে এ খাতে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হচ্ছে না। সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে নতুন প্রযুক্তির ব্যবহারের সমন্বয় বাড়াতে ৯৬ বছর পর সংশোধন করা হচ্ছে বয়লার আইন। এতে সর্বোচ্চ জরিমানার পরিমাণ বাড়িয়ে তিন লাখ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। কারাদণ্ডের পরিমাণ আগের মতোই থাকবে।

শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রধান বয়লার পরিদর্শকের কার্যালয় ১৯২৩ সালের বয়লার আইন সংশোধনে সম্প্রতি উদ্যোগ নিয়েছে। এরই মধ্যে সংশোধনের খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় ‘বয়লার আইন’ সংশোধনী ২০১৯-এর খসড়ার বিষয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সংস্থা ও বাণিজ্য সংগঠনসহ স্টেকহোল্ডারদের মতামত চেয়েছে। এরই মধ্যে বিভিন্ন সংস্থা ও সংগঠন তাদের মতামত দিয়েছে। এসব মতামত পর্যালোচনা শেষে সংশোধিত আইনের খসড়া আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে বলে শিল্প মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

সংশোধনীতে বয়লারবিষয়ক নতুন অনেক বিষয় সংযুক্ত এবং বেশ কিছু বিষয় পরিবর্তন করে আইনটি যুগোপযোগী করার প্রস্তাব করা হয়েছে। শাস্তি একই থাকলেও জরিমানা কয়েক গুণ করা হয়েছে। বিদ্যমান আইনে বিভিন্ন অপরাধে একশ’ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রয়েছে। সংশোধিত খসড়ায় তা সর্বনিম্ন দুই হাজার থেকে সর্বোচ্চ তিন লাখ টাকা পর্যন্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

কোনো ব্যক্তি আইন অমান্য করে বয়লার তৈরি করলে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড অথবা অনধিক তিন লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান সংশোধনীতে যুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া বরাদ্দ ছাড়া কোনো নিবন্ধন নম্বর বয়লারের গায়ে প্রতারণামূলকভাবে সংযোজন করা হলে দুই বছরের জেল বা দুই লাখ টাকা জরিমান বা উভয় দণ্ড হতে পারে। বয়লারের গায়ের নিবন্ধন নম্বর অপসারণ, পরিবর্তন, বিকৃত, অদৃশ্যমান বা টেম্পার করা হলে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হবে। অনুমতি ছাড়া বয়লারের স্থান পরিবর্তন, মালিকানা পরিবর্তন, বয়লারের অবকাঠামো পরিবর্তন করলে, পাশাপাশি বয়লারে ব্যবহূত পানির মান মাত্রা নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই ব্যবহার করলে ৫০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রাখা হচ্ছে। অন্যদিকে অবৈধ বয়লার ব্যবহারের শাস্তি ১০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে এক লাখ টাকা করা হয়েছে। স্বল্প পরিমাণ জরিমানার মধ্যে রয়েছে, বয়লার মালিক অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর বয়লারের গায়ে স্থায়ীভাবে সংযোজন না করলে এবং নতুন মালিকের কাছে সনদপত্র হস্তান্তরের অস্বাীকার বা অবহেলা করলে ২৫ হাজার টাকা জরিমানার বিধান করা হচ্ছে।

সংশোধিত আইনে বয়লারের সংজ্ঞায়ও পরিবর্তন আনা হয়েছে। এতে বয়লার বলতে বলা হচ্ছে- একটি আবদ্ধ পাত্র যা থেকে চাপের মাধ্যমে তাপের সাহায্যে বাহ্যিকভাবে ব্যবহারের জন্য বাষ্প উৎপাদন করা হয় এবং এই পাত্রের সঙ্গে সংযুক্ত কোনো উত্তোলন যন্ত্র অথবা অন্য কোনো ফিটিংস যা বাষ্পনলের ভাল্ক্ব বন্ধ হওয়ার পর সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে চাপযুক্ত থাকে। এই পাত্রের ধারণ ক্ষমতা ২৫ লিটারের বেশি এবং একশ’ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রা পানি গরম করা হয়।

এদিকে প্রধান বয়লার পরিদর্শকের কার্যালয়ে জনবল বাড়াতে সংশোধনীতে নতুন করে পদ সৃষ্টি করার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রধান বয়লার পরিদর্শক পদের পাশাপাশি উপ-প্রধান পরিদর্শক পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। এ ছাড়া নতুন সংযোজনের মধ্যে বয়লার বা বয়লার কম্পোনেন্ট উৎপাদনের ক্ষেত্রে শর্ত যুক্ত করা হয়েছে। এসব শর্তের মধ্যে বয়লার ও বয়লার কম্পোনেন্ট উৎপাদনের উপযুক্ত স্থান এবং নকশা ও নির্মাণ সুযোগ-সুবিধা না থাকলে কোনো ব্যক্তি উৎপাদন করতে পারবে না। এ ছাড়া ডিজাইন ও ড্রইং পরিদর্শনকারী কর্তৃপক্ষের অনুমতি থাকতে হবে। বয়লার ও কম্পোনেন্ট নির্মাণে ব্যবহারের সরঞ্জাম ফিটিংগুলো প্রবিধি অনুযায়ী হতে হবে। ওয়েল্ডার সার্টিফিকেটধারী ব্যক্তি দিয়ে ওয়েল্ডিং করতে হবে। এসব শর্ত না মানলে বয়লার বা এর উপাদান বা যন্ত্রাংশ উৎপাদন করতে পারবে না।