প্রকাশের সময় : September 19, 2020
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, করোনাকালীন তিন মাসে পোশাক রফতানি করে বাংলাদেশ ৩৮৪ কোটি ৫৪ লাখ ডলার আয় করেছে। এর মধ্যে এই ৯টি দেশেই রফতানি হয়েছে ৩০৪ কোটি ৭৪ লাখ ডলার। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগের তিন মাসের তুলনায় রফতানির এ পরিমাণ হচ্ছে অর্ধেক।
প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, গত জানুয়ারি থেকে মার্চ এই তিন মাসে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি তৈরি পোশাক রফতানি করেছে জার্মানিতে। পরের তিন মাসে অর্থাৎ (এপ্রিল থেকে জুন) করোনাকালীন তিন মাসে জার্মানিতে পোশাক রফতানি অর্ধেকে নেমে এসেছে।
[১] রাজধানীর তুরাগে ডিবি পরিচয়ে ডাকাতি, আটক ৬ ≣ হ্যাক হয়ে গেলো পাকিস্তানের ‘ডন নিউজ’, ভিডিও ভাইরাল ≣ আমরা আত্মহত্যা করতে চাইলে সরকার কীভাবে ঠেকাবে?বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে আরও জানা যায়, জানুয়ারি থেকে মার্চ এই তিন মাসে জার্মানিতে পোশাক রফতানি হয়েছিল ১৪৬ কোটি ২০ ডলার। কিন্তু করোনাকালে অর্থাৎ এপ্রিল থেকে জুন এই তিন মাসে জার্মানিতে মাত্র ৬৭ কোটি ৯০ লাখ ডলারের পোশাক রফতানি হয়েছে। অর্থাৎ তিন মাসে জার্মানিতে পোশাক রফতানি কমেছে ৭৮ কোটি ২৪ লাখ ডলার।
পোশাক রফতানির দ্বিতীয় শীর্ষ দেশ যুক্তরাষ্ট্রে এপ্রিল থেকে জুন এই তিন মাসে রফতানি হয়েছে মাত্র ৭৭ কোটি ডলার। যদিও আগের তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রফতানি হয়েছিল ১৩৯ কোটি ৬৯ লাখ ডলার। অর্থাৎ করোনাকালে রফতানি কমেছে ৬২ কোটি ৬৫ লাখ ডলার।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক আমদানির তথ্য সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান ওটেক্সার (অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেল) হিসাব অনুযায়ী, গত জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত এই সাত মাসে দেশটির পোশাক আমদানি কমেছে প্রায় ৩১ শতাংশ। এর ধাক্কা লেগেছে দেশটিতে রফতানিকারক প্রায় সব দেশেই। ওটেক্সার হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের সাত মাসে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রফতানি কমেছে ১৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ।
তথ্য অনুযায়ী, গত জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত সাত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রফতানি হয়েছে ২৯০ কোটি ৫৩ লাখ ডলারের। আগের বছরের একই সময়ে দেশটিতে রফতানির পরিমাণ ছিল ৩৫৬ কোটি ৬৫ লাখ ডলারের পোশাক পণ্য।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, পোশাক রফতানির তৃতীয় শীর্ষ দেশ যুক্তরাজ্য। এই দেশে করোনাকালে (এপ্রিল থেকে জুন) মাত্র ৩৬ কোটি ৯৬ লাখ ডলারের পোশাক রফতানি করে বাংলাদেশ। আগের তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) বাংলাদেশ পোশাক রফতানি করেছিল ৯৫ কোটি ১৭ লাখ ডলার। অর্থাৎ করোনাকালের তিন মাসে যুক্তরাজ্যে পোশাক রফতানি কমেছে ৫৮ কোটি ২০ লাখ ডলার।
শীর্ষ চারে থাকা স্পেনে করোনাকালীন সময়ে পোশাক রফতানি হয়েছে ২০ কোটি ৬৩ লাখ ডলার। তার আগের তিন মাসে দেশটিতে রফতানি হয়েছিল ৬০ কোটি ১৩ লাখ ডলার।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘করোনাকালে যুক্তরাষ্ট্রসহ পৃথিবীর সব দেশই আগের দেওয়া অর্ডার বাতিল করে।’ তার মতে, করোনার কারণে নতুন অর্ডার সেইভাবে হয়নি। আর ইতালিসহ ইউরোপের দেশগুলোতে করোনার প্রকোপ ছিল বেশি। যে কারণে ওই দেশগুলোতে রফতানি অর্ধেকে নেমে গেছে বলে জানান তিনি।
এ প্রসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘করোনার কারণে সারা পৃথিবীর মানুষ ঘরে বন্দি। পোশাক কেনার মতো পরিস্থিতিতে অনেকেই নেই।’ তিনি বলেন, ‘পোশাকের চাহিদা কমে যাওয়ার কারণে এমনটি হয়েছে।’ এর কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্রসহ সবদেশের মানুষ করোনা নামক বিপদ থেকে উদ্ধারের চেষ্টা করছে। ফলে বাংলাদেশের পোশাক রফতানি কমেছে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে করোনাকালীন তিন মাসে নেদারল্যান্ডসে পোশাক রফতানি হয়েছে ১১ কোটি ৫৬ লাখ ডলার। আগের তিন মাসে এই দেশটিতে পোশাক রফতানি হয়েছিল ২৫ কোটি ৯৩ লাখ ডলার।
ফ্রান্সে করোনাকালীন সময়ে পোশাক রফতানি হয়েছে ২৫ কোটি ৭৬ লাখ ডলার। তার আগের তিন মাসে দেশটিতে রফতানি হয়েছিল ৩৯ কোটি ৯৮ লাখ ডলার।
ইতালিতে করোনাকালীন সময়ে পোশাক রফতানি হয়েছে ১৯ কোটি ডলার। তার আগের তিন মাসে দেশটিতে রফতানি হয়েছিল ৩২ কোটি ১১ লাখ ডলার।
কানাডায় করোনাকালীন সময়ে পোশাক রফতানি হয়েছে ১৩ কোটি ৯৪ লাখ ডলার। তার আগের তিন মাসে দেশটিতে রফতানি হয়েছিল ২৩ কোটি ৮৭ লাখ ডলার।
বেলজিয়ামে করোনাকালীন সময়ে পোশাক রফতানি হয়েছে ৭ কোটি ২০ লাখ ডলার। তার আগের তিন মাসে দেশটিতে রফতানি হয়েছিল ১৫ কোটি ১০ লাখ ডলার।
প্রসঙ্গত, দেশের মোট পোশাক রফতানির প্রায় ৯৬ শতাংশের বেশি আয় আসে এই ৯টি দেশ থেকে। আগে দেশভিত্তিক সবচেয়ে বেশি পোশাক রফতানি হতো যুক্তরাষ্ট্রে। এখন সেখানে জার্মানির স্থান।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, দেশে মোট রফতানির ৮৩ শতাংশ আয় হয় তৈরি পোশাক থেকে। এর মধ্যে ৪১ দশমিক ৭০ শতাংশ আয় হয় ওভেন গার্মেন্টস পণ্য থেকে। এর বাইরে ৪১ দশমিক ৩০ শতাংশ আয় হয় নিটওয়্যার পণ্য রফতানি করে। এছাড়া, অন্যান্য পণ্য রফতানি করে আয় হয় ১৭ শতাংশ।