শ্রমিকদের রেশন ও আবাসনের দাবি

প্রকাশ : ০৩ মে ২০১৯

সমকাল প্রতিবেদক

শ্রমিকদের জন্য রেশন, আবাসনসহ বিভিন্ন দাবি ও অঙ্গীকারের মধ্য দিয়ে গত বুধবার পালিত হয়েছে মহান মে দিবস। রাজধানীসহ সারাদেশে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালিত হয় দিবসটি। শ্রম মন্ত্রণালয়সহ সরকারের একাধিক মন্ত্রণালয় ও বিভাগ, রাজনৈতিক দল, শ্রমিক সংগঠন, সামাজিক- সাংস্কৃতিক ও সাংবাদিক সংগঠন এসব কর্মসূচিতে অংশ নেয়।

শ্রমিকদের বিভিন্ন কর্মসূচি থেকে ট্রেড ইউনিয়ন করতে সব বাধা দূর করা, নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা এবং মাসিক রেশন চালুসহ অন্তত ১৩টি দাবি তোলা হয়। অন্যদিকে শ্রমিকদের সার্বিক কল্যাণে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার অঙ্গীকার করা হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। সাংবাদিকরা নবম ওয়েজ বোর্ড কার্যকর করার দাবি জানান।

দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য ছিল ‘শ্রমিক মালিক ঐক্য গড়ি, উন্নয়নে শপথ করি’। দিবস উপলক্ষে শ্রম মন্ত্রণালয়ের সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচির মধ্যে শ্রমবিষয়ক সেমিনারসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান রয়েছে।

দিবসটি উপলক্ষে বুধবার সকাল থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সড়কে সমবেত হন বিভিন্ন খাতের শ্রমিকরা। বিভিন্ন সংগঠনের কয়েক হাজার শ্রমিক সমাবেশ ও মানববন্ধন করেন। সিপিবি সমর্থিত গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, বাসদের সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টসহ অন্যান্য বামপন্থি দলগুলোর শ্রমিক সংগঠনগুলো প্রেস ক্লাব ছাড়াও আশপাশের এলাকায় সমাবেশ, মিছিল ও মানববন্ধন করে। বড় রাজনৈতিক দলের মধ্যে আওয়ামী লীগ সমর্থিত বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের একাধিক কর্মসূচি ছিল। বিএনপি সমর্থিত শ্রমিক দলের পক্ষ থেকেও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

শ্রম মন্ত্রণালয় :সরকারের পক্ষ থেকে দিবসের বড় আয়োজন ছিল শত শত শ্রমিক-কর্মচারীর অংশগ্রহণে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। সকালে দৈনিক বাংলা মোড় থেকে শোভাযাত্রা শুরু হয়। এতে নেতৃত্ব দেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান। উপস্থিত ছিলেন সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান, শ্রম মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব উম্মুল হাছনা, আওয়ামী লীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি শুক্কুর মাহমুদ, কার্যকরী সভাপতি ফজলুল হক মন্টু প্রমুখ। জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে শ্রম প্রতিমন্ত্রী বলেন, শ্রমিকরা ভালো থাকলে উৎপাদন বাড়বে, আর উৎপাদন বাড়লে দেশের উন্নয়ন নিশ্চিত হবে।

জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন :পুরানা পল্টন মোড়ে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য দেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। বিশেষ অতিথি ছিলেন লুৎফুন নেসা খান বিউটি এমপি। সভাপতিত্ব করেন জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আমিরূল হক আমিন। পরে অনুষ্ঠিত শোভাযাত্রায় তিন হাজারের বেশি গার্মেন্ট শ্রমিক অংশ নেন।

বিএফইউজে :বিএফইউজে-বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) ইউনিয়ন কার্যালয়ে যৌথভাবে এক আলোচনা সভার আয়োজন করে। সভায় সাংবাদিক নেতারা নবম ওয়েজ বোর্ড কার্যকর করার দাবি জানান। বিএফইউজের সভাপতি মোল্লা জালালের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন বিএফইউজে মহাসচিব শাবান মাহমুদ, সহসভাপতি সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী প্রমুখ।

সভায় সাংবাদিক নেতারা বলেন, গণমাধ্যম কর্মীরা চরম অর্থনৈতিক টানাপড়েনে দিন কাটাচ্ছেন। বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে তাদের জীবনযাত্রা দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। তাই অবিলম্বে সব প্রতিবন্ধকতা দূর করে নবম ওয়েজ বোর্ড কার্যকরের জন্য তারা সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি :বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও বাম গণতান্ত্রিক জোটের শীর্ষ নেতা কমরেড সাইফুল হক বলেছেন, শ্রমিকের রক্তে-ঘামে অর্জিত পয়সা কারখানার মালিকরা তাদের ব্যক্তিগত সম্পদ মনে করেন। বাংলাদেশ বিপ্লবী গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি সুমন হাওলাদারের সভাপতিত্বে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

বিলস :বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ-বিলস এবং সহযোগী সংগঠন ও নেটওয়ার্কের উদ্যোগে শোভাযাত্রা, সমাবেশ ও মানববন্ধন করা হয়। সকালে পল্টন মোড়ে গৃহশ্রমিক সমাবেশ হয়। এ ছাড়া বিলস এবং কেয়ার বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে পল্টন মোড়ে মানববন্ধন ও শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। রাজধানীর বাইরেও বিলসের কর্মসূচি পালিত হয়। রাজধানীর কর্মসূচিতে বিলসের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য মেসবাহউদ্দীন আহমেদ, শাহ মো. আবু জাফর উপস্থিত ছিলেন।

গ্রিন বাংলা গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশন :গ্রিন বাংলা গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের পক্ষ থেকে রাজধানীতে শ্রমিক সমাবেশ ও শোভাযাত্রা করা হয়। সংগঠনের সভাপতি সুলতানা বেগমের সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য দেন জাতীয় শ্রমিক জোটের সভাপতি মেসবাহদ্দীন আহমেদ ও সাধারণ সস্পাদক নুরুল আমীন।

এ ছাড়াও ঢাকা মহানগরীর প্রাইভেট কার ও ট্যাক্সি ক্যাব ড্রাইভার্স ইউনিয়ন, দি সিটি ব্যাংক কর্মচারী পরিষদ, আওয়ামী মোটরচালক লীগ, শ্রমিক নিরাপত্তা ফোরাম, রেডিমেড গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশন, জাগো বাংলাদেশ শিশু কিশোর ফেডারেশন, শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন ফেডারেশন, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন, কারিতাস সেফ প্রকল্প, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ, গৃহশ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠা নেটওয়ার্কসহ বিভিন্ন সংগঠন সমাবেশ ও শোভাযাত্রার আয়োজন করে।

রাজধানী ছাড়াও বিভাগীয় ও জেলা শহর এবং উপজেলা পর্যায়ে মে দিবসের বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হওয়ার খবর জানিয়েছেন সমকালের সংশ্নিষ্ট প্রতিনিধিরা।